৭
"সকলে বিরিয়ানী
ভাত খেতে পারে না, কিন্তু সাদাভাত সবাই খায়। ঠিক সেভাবেই চাবাগানের মালিক সবাই হতে পারে না, কিন্তু শ্রমিক
যে কেউ হতে পারে। আর এই মালিক শ্রেণী যে
হারে ডুয়ার্সের চা বাগানের ওপর ডিপেন্ড করে বেঁচে থাকা জনজাতিকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে
তাতে করে আবার একটা বিদ্রোহ দানা বাঁধতে দেরি নেই।
বিড়াল বন্ধ ঘরে কোনঠাসা হয়ে পড়লেই টুটি লক্ষ্য করে জাম্প করে, এবং সেই লক্ষ্য বরাবর অব্যর্থ থাকে।
চা বাগানের প্রতিটি শ্রমিক শিল্পী। তাদের
পাতা তোলার ঐ নিপুন হাত আমরা তৈরি করতে পারব না, কিংবা ওদের যে পরব, গান - নাচ - হাড়িয়া। আমি
ওদের সাথে কাটিয়ে এসেছি, দেখেছি জীবন কাকে বলে, শিল্প কাকে বলে। শ্রম না করলে যেমন পারিশ্রমিক পাওয়ার মজা নেই, তেমনি মানুষের সাথে না মিশলে মানুষকে চেনারও কোনো উপায় নেই। আমার মামাবাড়ি
চাবাগানের ভেতর বলেই জেনে আসতে পেরেছি। এবং ওদের ক্ষোভের কথাও। ছাইচাপা আগুন। গোপন সূত্রে এমন একটা খবরও পেয়েছিলাম
যা রীতিমতো আমাকে শিহরিত ও আতঙ্কিত করেছিল।
এইসব চা বাগান
বন্ধের পেছনে গোর্খাদের হাত আছে। তারা চায় এই এলাকার সমস্ত চাবাগান সরিয়ে জনবসতি গড়ে
তুলতে,
এবং আস্তে আস্তে যাতে গোর্খাল্যাণ্ড এর দাবীকে আরোও প্রবল করা যায়।
পাহাড় থেকে, সিকিম - নেপাল থেকে সমস্ত
গোর্খারা এসে এখানে গ্রাম গড়ে তুলবে - তাদের পিছনে আছে চীনের
মদত। অস্ত্র সাহায্য এবং মাস্টারপ্ল্যান সব ওদের। এই কথা গুলো ভাবলেও আমার সারা
শরীর আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। এ যেন অনেকটা 'খেলনা নগর'-এর মত। ইনটেনশনালি একটা জনজাতিকে শেষ করে দেওয়া। এভাবে চা বাগান বন্ধ করে শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন
করে পুরোটা দখল করে নেওয়া। কিছু কিছু শ্রমিক আছে বন্ধ চা বাগানগুলোতে, যারা কাজ না থাকলেও
বাইক হাঁকিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
তাদের হাতে অর্থ আসছে কোথা থেকে? কে জোগাচ্ছেন কর্মহীন মানুষ গুলোর
খাদ্য? আর কেউ কেউ নদীতে পাথর ভেঙে, শরীর বিক্রি করেও পেটের ভাত জোগাতে পারছে না। একই বন্ধ চাবাগানে এই বৈসাদৃশ্য
আশ্চর্য নয় কি?"
কদমতলায় প্রায়
প্রতি সন্ধ্যাতেই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দল সভার আয়োজন করে। একটা কোণ মত জায়গায় ছোট্ট
মঞ্চ বানানো হয়, সামনে কিছু চেয়ার, এই
প্রচন্ড ভীড়ের মধ্যেও দিকে দিকে মাইক লাগিয়ে কানের মাথা খাওয়া বক্তৃতা দিতে থাকেন নেতারা।
কিন্তু আজ প্রথম বার আমি খুব মন দিয়ে ওদের বক্তৃতা শুনলাম। এই যুবনেতাটির কথা শুনে
আমি মোহিত। একদম সত্যি কথা গুলো এত সাহসিকতার সাথে এই ভাবে জনসমক্ষে তুলে ধরা মোটেই
সহজ কাজ নয়। তার মধ্যে ওঁর
সবচেয়ে বড় গুন ওনার প্রেজেন্টেশন , এত সুন্দর যে রাজনৈতিক
বক্তৃতা হতে পারে এ আমার কুড়ি বছরের জীবনে জানা ছিলোনা। অবিশ্যি এত অল্প বয়সে এত কিছু
জানা সম্ভবও নয়। উনি যেন সাহিত্যিক। একমাত্র সাহিত্যিকেরাই এত সুন্দর উদাহরণ -
যুক্তি দিয়ে কবিতার মত সুন্দর একটা বক্তৃতা দিতে পারেন। আমার সকাল
থেকে শুরু হওয়া সমস্ত স্ট্রেস ঝড়াম করে কেটে গেল। উনি কী বললেন, তা আমার ভালো লেগেছে না মন্দ লেগেছে তা আমি সমর্থন করি কিনা সেটা বড় কথা
নয়। বড় কথা ওনার বাচন দক্ষতা। ঐ যে শুরুতে শিল্পী নিয়ে যে কথাগুলো বললেন, জীবনবোধ না থাকলে ওসব বলা সম্ভব নয়। একদম আমার সাথে মিলে যায়। আমার কিছুতেই
ওনার বক্তব্য রাজনৈতিক বলে মনে হচ্ছে না। এটা রাজনৈতিক বক্তৃতা হতে পারে না। কোনো দুর্দান্ত গল্প বা উপন্যাসের একটি অংশ যেন উনি পড়ে
শোনালেন। আহা!
"শুনছেন?"
"হ্যাঁ ,
বলুন।"
"আপনার নাম দেবাঞ্জন?"
"হ্যাঁ।"
"আপনাকে একবার
যেতে হবে আমার সাথে।"
"কোথায়?
থানায়?"
মেয়েটি এবার
হেসে ফেললো। তারপর বললো,"আরে নানা, হিহিহি, ওই আলোচনা সভায়, সামনের চেয়ার গুলোর দিকে তাকান, আপনার বন্ধু শ্রীজিতা
বসে আছে। ঐ ডাকতে পাঠালো আমায়।"
"আচ্ছা।"
"হঠাৎ থানা বললেন
কেন? আপনি গুন্ডা মস্তান নাকি চোর?" চেহারা দেখে অবশ্য ..."
"আসলে আমি সব
কটাই।"
"মানে?
ইয়ার্কি করছেন?"
"না। আমি ইয়ার্কি
করি না। আমাদের
ব্রেন কখনো ইয়ার্কি বোঝে না।
সে যা করে তা করতে চাইছিল বলেই করে।"
"আচ্ছা আচ্ছা
, ঠিক আছে , এখানে সাইকোলজির ক্লাস
নিতে হবে না। আপনি মহা
রসিক ছেলে আছেন। এখন চলুন, শ্রীজিতা ডাকছে। ওখানে গিয়ে আপনার
থিওরি শুনবো।"
"উহুঁ ,
ওখানে আমি যাবো না।
ওকে ডেকে নিয়ে আসুন। ও আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছে। ওর আসা উচিৎ , আমার নয়।"
"বাব্বা!
আপনার তো হেব্বি ঘ্যাম! আচ্ছা ঠিক আছে। ওকেই
ডাকছি। কিন্তু চোর ডাকাতের ব্যাপারটা
বললেন না কিন্তু। ওটা শুনে তারপর ওকে ডাকতে যাব।"
"আমি সময় চুরি
করি। আর তা দিয়ে গুন্ডা মস্তানি করে অতীতের সময়কে ভয় পাইয়ে দিই, আসলে অতীতের কুকান্ডগুলোকে ওভারকাম
করার জন্য বর্তমানের সময় চুরি করে সেগুলো মেরামত করে আসি। আর মেরামত করতে গেলে তো একটু
মাস্তানি করতেই লাগে , তাইনা?"
এই প্রথম মেয়েটার
সাথে কথা বলতে বলতে আমি হাসলাম। আমার দিকে কালো হরিণ চোখ তুলে অবাক হয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে মেয়েটা ফিসফিস
করে বললো,"ইন্টারেস্টিং!" তারপর হনহনিয়ে সভার মধ্যে
ঢুকে গেলো। এরা নিশ্চয় সবাই ছাত্র রাজনীতি করে। আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। কিন্তু শ্রীজিতার সাথে দেখা করতেই
হবে এমন আগ্রহ বোধ করছি না।
সকালের থেকে এখন অনেক ভালো আছি। কাজেই এখন আমার কাউকে প্রয়োজন নেই।
৮
দুপুর থেকে
সন্ধ্যা ৬টা , কি হুহু করে সময়টা চলে গেলো। এবং আমি সব কিছু ভুলে
গেছি। সময় সব ভুলিয়ে দেয়। সব কিছু। এ পৃথিবীতে ভগবান যদি কাউকে মানতেই হয় তো সেটা একমাত্র
সময়কে। কিন্তু সকালে দুদলা ভাত খেয়ে এতক্ষন থাকা যায়না। সময় সব কিছু মনে করিয়েও দেয়।
এখন সবাই আমার সামনে দিয়েই আদর্শ ব্যায়ামাগারে যাচ্ছে ডন বৈঠক মারতে। সন্ধ্যায় অনেকে
শরীর চর্চা করে। আমার পেটের ভেতরেও ছুঁচোরা এখন ডন বৈঠক মারছে। পকেটে মাত্র চোদ্দো
টাকা পড়ে। দশটাকার একটা ছানার জিলিপি খেয়ে পেট ভরাতে চাইলাম, কিন্তু তাতে খিদেটা আরো চাগাড় দিয়ে উঠতে পারে। তার চেয়ে চা বিস্কুট খাওয়া
যাক। খিদেটা মরে যাবে।
দোকানের নাম
'জামাই এর চায়ের দোকান', কিন্তু 'দোকান'-এর কোনো ছিটেফোঁটা নেই। একটা টেবিল লাগিয়ে
ব্যবসা। রাতে সমস্ত 'দোকান' বাড়ি
নিয়ে যায়। কিন্তু সান্ধ্যকালীন জলশহরের যে ঠেকের রেওয়াজটা আছে তা এইসব 'দোকান'-গুলোতেই
জমে ভাল। এখন সদ্য শুরু হয়েছে ভীড়টা, যত সন্ধ্যা হবে -
রাত বাড়বে আড্ডা আরোও গাঢ় ও লোকের ভিড়ে রমরমে হয়ে উঠবে।
"এই দেবু!"
কি মুশকিল! যেখানেই যাইনা কেন , কেউ না কেউ পরিচিত লোক বেরিয়েই পড়ে। একদম একা থাকার জো নেই। জেলা স্কুলের
বন্ধু সূর্য। এই ভর সন্ধ্যে বেলা সূর্য দেখা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বৈকি!
"কি রে কী খবর?
আছিস কেমন?"
"ভালো।"
"বাহ!
গুড ব্রো।"
"হ্যাঁ।"
"হ্যাঁ কি রে? আমি কেমন
আছি জিজ্ঞেস করলি না? এতদিন পর দেখা!"
"তুই যে দিব্যি
ভালো আছিস সে তো দেখেই বোঝা যায়। জিজ্ঞেস করে জানার মত এমন তো কোনো ব্যপার না।"
"তা নয়,
কিন্তু সৌজন্য --- ছাড় গে --- তারপর বল কি করছিস এখন?"
"আমি এখন এই দোকানে
চা খাব।"
"আরে বাপ্,
তা বলিনি! বলছি কি করা হচ্ছে এখন ?
মানে কি পড়ছিস?"
"জাঁ পোল সার্ত্রের
নির্বাচিত গল্প। এই বইটাই পড়া চলছে আপাতত। বুঝলি, একেকটা গল্প
অসাধারণ! প্রতিদিন একটা করে পড়ছি।"
সূর্য এবার
আমার দিকে কটমট করে তাকালো। তারপর একটা খিস্তি দিয়ে বললো ,
"শালা!
পাল্টালি না
তুই। জানি তোর ফ্রিকোয়েন্সি অনেক হাই লেভেলের , আমরা তা ধরতে
পারি না। কিন্তু
তোর তো অন্তত আমাদের কে বোঝার জন্য -মেশার জন্য নামা দরকার।
নাহলে তো এগুলো ঢ্যামনামো মনে হয়। এতদিন পর দেখা , কোথায় হৈহৈ
করবি - আড্ডা দিবি, তা না ---"
"আমি কি আড্ডা
দিচ্ছিনা? দেখ তুই যে যে প্রশ্ন করেছিস প্রত্যেকটার সঠিক উত্তরই
দিয়েছি। কোনো গলদ নেই।"
"হ্যাঁ,
দিয়েছিস , কিন্তু আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের
মত প্রশ্নগুলোর সরাসরি উত্তর দিসনি, অন্যভাবে ব্যাখা করেছিস।
মাইরি অস্বস্তিকর হয়ে উঠছিস দিন কে দিন। আমি বলে এটা সহ্য করছি , অন্য কেউ হলেনা ---"
এরকম কথা সবাই
বলে 'আমি বলে সহ্য করছি' , আরে বাপু তুমি নিজেই একমাত্র
সহনশীল আর বাদবাকি সব ক্ষ্যাপা কুকুর!
মানুষ জনকে
ক্ষেপিয়ে তুলতে আমার দারুন লাগে। নিজে এখন আর চট করে রাগি না। সেসব ক্লাস টুয়েল্ভেই ছেড়ে এসেছি। রেগে যাওয়া খুব
খারাপ জিনিস , কিন্তু যাদের এ ধরণের হাল্কা কথায় রাগিয়ে দেওয়া যায় তাদের রাগ খুব তাড়াতাড়ি
পড়েও যায়। এতে তাদের বড্ড উপকার হয়। শরীরের সমস্ত রাগ গুলো বেরিয়ে সে সুস্থ মানুষ হয়ে
ওঠে।
"চা খাবি?
আমার কাছে দশ টাকার একটা নোট আছে খালি। দুজনের হয়ে যাবে।"
সঙ্গে সঙ্গে
সূর্য বলে উঠলো,"নানা , থাক,
আমি খাওয়াচ্ছি। তুই মাঝে মাঝে এমন বিহেভ করিস না! মাথা গরম করে দিস একদম। কেন করিস এ রকম?"
আমি ওর কথার
উত্তর না দিয়ে 'জামাই' দা-কে দুটো চা দিতে বললাম। আমার বাবাও লোকটাকে 'জামাই’-দা বলে, আমিও। কিন্তু উনি কার জামাই তা আর কোনোদিন জানা হয় না। এমনকি ওঁর নাম 'জামাই' হলেও আমার ওঁকে
দাদা বলার কথা নয়। বাবার দাদা আমার 'জেঠু' হবেন। আসলে জেঠুর
বয়সী একটা লোককে দাদা বলে ডাকলে নিজেকেও বেশ বড় বড় মনে হয়।
"দেবু,
আমি বড় মনোকষ্টে আছি রে।"
"আচ্ছা। মনকে
শান্ত রাখ। কষ্ট কেটে যাবে।" চায়ে চুমুক দিতে দিতে বললাম।
"আশ্চর্য! তোর একবারও জানতে ইচ্ছে হলোনা
আমি কেন মনোকষ্টে আছি? তুই আগেই উপদেশ ঝাড়ছিস!"
চা সুড়ুত সুড়ুত
শব্দ করে খাওয়া ইংরেজদের এটিকেটের অনেকটা বাইরে পড়ে। তবে ওসব এটিকেট আমার কাছে মূল্যহীন।
তাই সুড়ুত সুড়ুত শব্দ করতে করতেই উত্তর দিলাম,"উহুঁ ,
জানতে ইচ্ছে হলোনা।"
"তোর কৌতুহল নেই?"
তুই কি মানুষ! "
"দুঃখেষ্বনুদ্বিগ্নমনাঃ
সুখেষু বিগতস্পৃহঃ
বীতরাগ ভয়ঃ
ক্রোধঃ স্থিতধীর্মুনিরুচ্যতে।।"
"মানে?
আমার সাথে ইয়ার্কি মারছিস শালা! কী পেয়েছিস কি আমাকে?"
"গীতা। এর মানে
, যার দুঃখে মন উদ্বিগ্ন হয় না, যিনি নিস্পৃহ
ও বিরাগী, ভয় ও ক্রোধ বর্জিত, তাকেই
স্থির মানুষ বলা হয়, সিদ্ধ পুরুষ বলা হয়।"
"তুই কি নিজেকে
সিদ্ধ পুরুষ মনে করিস? শালা মেয়েবাজ! কত কত মেয়ের সাথে লাইন মেরে এখন সিদ্ধ পুরুষ!"
এরকম সময়ে একটা হাসি দিতে হয়। আসলে
এটাই যদি সকাল হতো, অর্থাৎ আজকের সকাল, তাহলে ঐ 'মেয়েবাজ' বলার
জন্য ওকে আমি গীতার শ্লোক উপেক্ষা করে, এই সন্ধ্যার ভিড় উপেক্ষা করে, রেগে না যাওয়া উপেক্ষা করেই একটা ঘুষি ঝেড়ে দিতাম। কিন্তু সময় বদলেছে। সন্ধ্যাবেলা
সুর্য নিভে যাওয়ার সাথে সাথে আমি আমার সম্পূর্ণ চরিত্রটাকে বদলে ফেলতে চেষ্টা করি।
তাছাড়া সূর্য আমায় চা খাইয়েছে - আমি ওকে মারলে সেটা অধর্ম
হবে।
"আসলে তোর এই
ভড়ং , এই ঢ্যামনামির জন্যই কোথাও কারোর সাথে মিশতে পারলি না রে দেবু , নাহলে আজকের দিনে এই সন্ধ্যায় তুই একা একা পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছিস!
আঁতেল শালা!"
"তুইও তো একাই
এসেছিস চায়ের দোকানে। এই একই কথা তো তোকেও বলা যায়!"
"না, বলা যায় না।
আমি অন্তত আঁতেল নই। আচ্ছা বন্ধু, আর কত রাগাবি বলতো? ঠিক আছে , তোর শোনবার কৌতুহল না থাকতে পারে কিন্তু
আমার বলবার কৌতুহল আছে।"
"ওটাকে 'বলবার কৌতুহল' বলেনা। আগ্রহ বলে।"
"হ্যাঁ ,
ঐ হলো। শোন।"
"বল।"
"অঙ্কিতার সাথে
আমার রিলেশনশিপটা ভেঙে গেছে।"
আমি যদি এখন
জিজ্ঞেস না করি 'কেন?' তাহলে
ওটা নিয়ে সূর্য আরোও জলঘোলা করবে। দুর্বল মানুষেরা বড়ই অসহায়। যেকোনো বিষয়কেই তারা
খারাপ ভাবে নিয়ে নেয়। তাই বলতেই হলো , "কেন?"
"আমার রিসেন্টলি
'হিস্টিরিয়া' ধরা পড়েছে। আমি রাত্রিবেলায়
বাড়ির বাইরে হঠাৎ হঠাৎ সমুদ্রের আওয়াজ পাই। আমার তখন খুব সমুদ্র স্নানে যেতে ইচ্ছে
করে। এসব জানার পর থেকে ---"
"এসব জানলো কী করে?"
"আমিই বলেছি।"
"বাহ!
এটা খুব ভালো করেছিস। তুই তোর দিক থেকে একদম সৎ থেকেছিস। লুকোসনি
কিছু। অন্তত এটা প্রমাণিত হয়ে গেল অঙ্কিতা তোকে সত্যি সত্যি ভালোবাসতো না।"
"এটা কোনো সলিউশন
হলো?"
"হ্যাঁ ,
এটাই সত্যি। তুই খুব লাকি যে এরকম একটা মেয়ের হাত থেকে বেঁচে গেছিস।
থ্রী চিয়ার্স ফর হিস্টিরিয়া। যে তোকে ভালোবাসবে সে তোর রোগ -ভোগ - আনন্দ - দুঃখ সব
কিছু নিয়েই ভালোবাসবে।"
সুর্য মুখ নিচু
করে দাঁড়িয়ে থাকলো। রাস্তা দিয়ে অজস্র গাড়ি যাচ্ছে। আলোকিত সন্ধ্যায় সকলে বেরিয়েছে
প্রেমিকা সহ। একজন আঘাতপ্রাপ্ত পুরুষের সান্নিধ্য এখন আর ভালো লাগছে না।
"অতএব নতুনের
সন্ধানে বেরিয়ে পড়ো দোস্ত। আমিও বেরোবো এখন।"
বলে চায়ের কাপটা
নামিয়ে রেখে সূর্যের কাঁধে হাল্কা একটা চাপড় মেরে রাস্তায় নেমে পড়লাম।
No comments:
Post a Comment