বোতাম বেঁধে নিয়েছি
অক্ষর পুঁতে পুঁতে তৈরি করা পোশাক ক্রমশঃ আলগা হয়ে আসে। বারান্দায় মেলে দিই
উদাস হাওয়া। রেলিং-এর ধার ঘেঁষে আপাতত পাখি এসে বোতাম খুঁটে খাচ্ছে -- পারছে না।
বীজ নেই, চাল নেই, শুধু দুই সীমা ঢাকার মতো বোতাম এক ভুলের সমান আঁকড়ে আছে শরীরে।
কী করব এরপর? খোলা বুকে হাওয়া আসবে কবি?
তুমি
বল, আমি দ্বার খুলে দাঁড়িয়েছি।
দমকা
বিশ্বাস মাঝে মাঝে নড়া ধরে ঝাঁকুনি দেয়। আমি জামা খুলে উড়িয়ে দিলেও সে তো উত্তরীয় হবে
না, তাই বোতাম বেঁধে নিয়েছি। মুখের কাছে ভুল থাক পাখির ক্ষুধার মতো, আমি মানিয়ে নিতে
পারি।
বন্ধ
থাকার মতো সুখ আর কারো হয়, কবি? পাখিরা জানে না। তুমি যা জানো, তারও অক্ষরে
ক্ষয়দাগ ---
প্রথমতঃ সেকেন্ড পার্সন ন্যারেটিভ?
স্পষ্ট নয়, একবার মাত্র 'তুমি' শব্দটা আছে, সে তুমি নিজেকে যেমন, তেমন রবীন্দ্রনাথকেও
হতে পারে। তবু --
তবু,
বোতাম। বোতাম আটকে নিই আমরা। বা, বোতাম পরে নিই। বা, পরিয়ে। অথবা এঁটে নিই। বোতাম বেঁধে নিই? কবি বোতাম বেঁধে নিচ্ছেন। খটাস করে
'বেঁধে নেওয়াটা' লাগে আর পুরো লাইনটায় ছড়িয়ে যায়। তারপর পুরো কবিতাটিতে।
উত্তরীয়র যুগ তো নেই! জানি আমরা। জামা এসে গেছে বহুদিন। তার
আগে কামিজ, তার আগে অঙ্গরাখা। উত্তরীয় এখন ওড়না হয়ে হিন্দি সিনেমায় ওড়ে।
এসব
এমন কিছু না। এসব অনেক কিছু। কী বলছি, কীভাবে বলছি, সিনট্যাক্স আঙ্গিক প্রকরণ
হ্যানা ত্যানা গুচ্ছ। ব্যাপার এটুকুই, বোতাম, বেঁধে নেওয়াও যেতে পারে।
বা, ধরা যাক,
সিগারেট কবিতাটি।
ধর তুই
এখন মুখ ধুতে উঠলি। তারপর শেভিং। দাড়ি কাটা মুখটা আয়নায় দেখতে দেখতে একটা সিগারেট জ্বলল।
সিগারেটটা তুই রাখলি অ্যাশট্রের উপর। টানলি না। ধোঁয়ায় গোটা ঘরটা ভরে গেল।
কিংবা,
স্নান সেরে ঘরে আলো জ্বেলে এককোণে ধূপ জ্বাললি। ঠাকুরের ছবির সামনে রাখলি। ধূপের
গন্ধ, ধোঁয়ায় ভরে যাচ্ছে ঘরখানা।
ঠাকুরের
বাঁধানো ছবিতে তোর ছায়া। ছায়ার ওপারে ঠাকুর। তুই তোকে ধূপ দেখাচ্ছিস। প্রণাম
করছিস। রাস্তায় বেরোনোর আগে, ঘুমোতে যাবার আগে ঠাকুর প্রণাম করছিস। অথচ ঠাকুরের
সামনে তুই। ঠাকুর তোকে দেখতে পাচ্ছেন না। তুই দেখতে দেখতে সিগারেট হয়ে যাচ্ছিস।
সেই
সেকেন্ড পার্সন ন্যারেটিভই। ছায়ার ওপারে যখন ঠাকুর, তখন এক অনৈসর্গিক ছমছমানি হয়। চোখের
ফোকাল লেংথ পাল্টে পাল্টে দেখলে কখনো ঠাকুর, কখনো আমি হতে হতে আমিই ঠাকুর হবার কথা।
অথচ শেষ লাইনে 'তুই দেখতে দেখতে সিগারেট হয়ে যাচ্ছিস'। অসাধারণ ধরণের ঝটকা? না। মৃদু।
নিরীহ। আমার এ ধূপ না পোড়ালে। এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই।
বইয়ের নাম-
'আখর পোশাক'।
কবি তপোব্রত
মুখোপাধ্যায়।
তপো-র জার্নিটা স্বাভাবিক গদ্য থেকে বিবর্তিত অক্ষরভানের কিছুটা বেশি। ও আড়ালে-আবডালে, মাঝেমধ্যে ইনবক্স, আমিও, সামর্থমত। কিন্তু যা দেখিনি, বা দেখে উড়ে গিয়েছি, সুপ্রিয়বাবু তার নাড়ি ছুঁয়ে দেখালেন। সমালোচনার ভঙ্গীতে এক চেনা নব্বই থেকে শূন্যের দিকে হাঁটার স্পর্শ। আর বিষয়বইটি তো বলাই বাহুল্য, বন্ধুর পুনরুত্থানের শিশিরটি। উভয়কেই শুভেছা।
ReplyDelete