বাক্‌ ১৪০ ।। তপোভাগ-১১শ পর্ব।। সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়



।। মাথুর ।।



অল্প জলের শফরী, বড়ো মিষ্ট স্বাদ, তেল টানে বেশি, আর বড্ড ফড়ফড় করে।

        একটু গভীরে গেলেই এ মৎস্যের সমস্যা হয়। সে আকারে অল্প বাড়ে এবং নরম হয়ে যায়। কাঁটা অনেক বেড়ে যায়। ছোটো আকারে যে কাঁটা সহজে বিমুক্ত করা যায়, একটু বড়ো আকার হলে সেই কাঁটার সঙ্গে বহুবিধ আরো কন্টক যুক্ত হয়। সেই কাঁটা মাংসে মিশে থাকে। দাঁতের ফাঁকে লুকিয়ে আটকে পড়ার জন্যই যেন দেবাধিপতি ইন্দ্র তাদের সৃজন করেছেন।

         নাগেরা এই মৎস্য উত্তমরুপে রন্ধন করতে পারে। যাদবরা মৎস্য খেতেই জানে না। ক্বচিৎ কদাচিৎ বৃহৎ এক আধটি ভর্জিত মৎস্যখণ্ড আসব সহযোগে কেউ কেউ খায় বটে, কিন্তু রন্ধনপ্রণালী জানে না, শেখারও ইচ্ছে নেই। উত্তমরূপে রন্ধন করতে এই নাগেরাই পারে। যমুনার এই পূর্বকূলে নদীর অল্পদূরে একটি ছোটো নাগবসতি। এইদিকটা ফাঁকা ফাঁকা। ছেলেরা কেউ নৌকা নিয়ে মাছ ধরে, কেউ জাল পেতে ধরে বন্য পশুপক্ষী, কেউ ধনুর্বাণ নিয়ে অরণ্যে ঢোকে, তবে লুকিয়ে। এবং একত্রে বেশ কয়েকজন। নাগদের অস্ত্রসহ দেখলে যাদবরা মেরেধরে তাদের অস্ত্র কেড়ে নেয়। যদূবংশ অনেক কূলে ভাগ বটে, কিন্তু অন্যদের বিরুদ্ধে তারা সর্বদাই একজোট। নাগেরা অন্যরকম, প্রায় মনুষ্যেতর বলা যায়, তাদের সর্বদাই দণ্ডের নিচে রাখা উচিৎ। তবে, নগরপ্রান্তে নাগবসতি থাকার সুবিধে আছে। পূর্বদেশে ওই এক অনড্বান জরাসন্ধ আছে, সেই বিঘোরমস্তক কবে যে মথুরা আক্রমণ করে তার ঠিক নেই। প্রায়শঃই তার আক্রমণের রটনা শোনা যায়, কখনো বা সাতদিনের দূরত্বে রয়েছে তার ডিম্ভকীয় সেনা, কখনো বা দশদিনের মধ্যেই এসে পড়বে বলে বিপণীহট্টে পথেঘাটে শোনা যায়। সেই পাষণ্ড যদি এসেই পড়ে তো নগরী আক্রান্ত হবার আগে এই নাগবসতিই ধ্বংস হবে, তারা প্রতিরোধও করবে স্বভাবতঃই, যাদবরা যুদ্ধপ্রস্তুতি ও পলায়নের সময় পেয়ে যাবে।

             নগরপ্রান্তে নাগবসতি থাকবার সুবিধা আছে আরও। এরা চটপটে চালাকচতুর, দ্বার ও বাতায়নের কাষ্ঠগঠন ও রথের কাজ এরা ভালো জানে। মৎস্য ধরবার জাল বানাতে এরা অদ্বিতীয়। ছেলেরা মাছ ধরে, নৌকা পারাপার করে, মাছ নিয়ে বসে তাদের কন্যারা। অক্রুর প্রায়ই এই নাগকন্যাদের কাছে মাছ নিতে যান। না তিনিও মাছ ততো বেশি খান না, ভর্জিত হলে তবু খাওয়া যায়, কাঁটার ভয় কম থাকে। আর, শুধুমাত্র এই শফরীমৎস্যই তিনি রন্ধন করা অবস্থায় খেয়েছেন, নাগকন্যার রাঁধা এই মৎস্যের স্বাদ উত্তম।

            অবশ্য নাগকন্যারও স্বাদ উত্তম। শুধু মৎস্যের কারণেই তিনি এখানে ঘাই মারেন, এমন নয়। আর্যরমনীদের মধ্যে যাদের দেহাবয়ব সুগঠিত, তাদের মধ্যে অধিকাংশই শক্তগোছের শরীর। দেখতে ভালো, খেতে নয়। নাগকন্যারা খেতে বড়োই মিষ্ট।

          ধৃতা আর সুধন্যা, দুই অন্ধককন্যা। শফরী মৎসের সামনে দাঁড়ালেই ওই দুটির কথা অক্রুরের মনে পড়বেই, নির্ঘাত মনে পড়বে। বড়টি এখন একটু গভীর জলে গেছে, কাঁধপিঠকোমর ভারী হয়েছে, মাংস নরম হয়েছে আর সূক্ষ্ম কাঁটা বেড়েছে বোঝাই যায়। তাকে ভর্জিতই বিধেয়, ছোটোটি সদ্য তপ্ত তৈলে পড়েছে, বড্ড ফড়ফড় করছে ইদানীং, সেটি সবরকমেই উপাদেয় হবে!

            পিতাটি আঢ্য তাদের। একসাথে দুইটি অন্ধককন্যাকেই গ্রহণ করবেন কিনা, মধ্যে মধ্যে সে চিন্তায় অলসযাপন করা অক্রুরের প্রিয় ব্যসন। বৃষ্ণিবংশের সন্তান তিনি, নাগরিক সম্মান অথবা অর্থকৌলীন্য, কোনোদিকেই অভাব নেই। উন্নত স্বাস্থ্যবান শরীরে সদ্যযৌবনের নবীনতা, কিসের অভাব তার? ধৃতা আর সুধন্যা। ওঃ বালিকাদুটি বড্ড পিছল গোছের, যেন ধরা যায় না কিছুতেই। নারী এক সুরম্য বিষয়, জীবনে কতিপয় নারী ইতিমধ্যেই অক্রুরের দেখা হয়েছে। সে সবই ঠিক। এই বালিকাদুইটি, নারীই অথচ ঠিক যেন রমণী নয়, যেন জলতলে রমনীছায়া, এমনই অস্থির সৌদামিনী। বাক্যব্যয় করতে চায় না সহজে, কিন্তু যদি করে তো দুয়েকটি কন্টক অক্রুর হৃদয়ে গেঁথে নিয়ে আসেন। আঃ কি রোমাঞ্চকর! কখনো কখনো নিজেকে অল্প কষাঘাত অনুভব করাতে ভালোই লাগে, পিত্ত অধোগামী হয়, চিত্ত সুস্থির হয় তাতে৷ এই দুই সহোদরার মুখে বল্গাস্থাপন করতে পারলে, নিজের আয়ত্তে আনতে পারলে, তবেই না পৌরুষ! হ্যাঁ, পিতাটি আঢ্য বটে, অন্য পুত্রকলত্রও নেই তাঁর, ফলে যমুনাতীরবর্তী কাননসংলগ্ন প্রাসাদটিও অক্রুরেরই, তাঁর ধনসম্পত্তিও, কন্যারত্নদুইটিও। ছিপ ফেলে বসে রয়েছেন অক্রুর, সময়মতো দেখা যাবে।

         সারি দিয়ে কাছাকাছি বসে অনেকগুলিই নাগকন্যা মৎস শামুক ও কাছিম বিক্রয় করে, যেহেতু এ যাদব অধিকারের স্থান তাই যাদবরা কেউ কেউ তাদের কাছে কর হিসেবে হাটদান গ্রহণ করে। যদিও এই হট্টের দানের কোনো কথা মথুরা পরিষদে নেই, অর্থাৎ সেই দান, যে গ্রহণ করে, তার গৃহেই যায়। নিয়মিত অবশ্য গ্রহণ করা হয় না কারণ তাদের অতো উপার্জনই হয়না। পঞ্চ মুদ্রা উপার্জন করে যদি সপ্তমুদ্রা দান দিতে হয় তো তারা কেউ ক্ষেপে গিয়ে মথুরাপরিষদে অভিযোগ করতে পারে। তাতে এই উপরি পাওয়া দানের সুবিধাটি নষ্ট হতে পারে। অক্রুর অর্থদান গ্রহণ করেন না, অন্যভাবে পুষিয়ে নেন। অর্থ জরুরী বিষয় ঠিকই, তবে তা আয়ত্ত করার বহু পথ আছে। এখানে যা পাওয়া যায় তা অন্য সম্পদ!

            পিপ্পলীবৃক্ষতলে যে নাগকন্যাটি বসে, তার নাম মন্নি। কি এই নামের অর্থ, কে জানে! বৃক্ষের পশ্চাদ্ভাগে একটি চালাঘর রয়েছে, তাতে এই স্থানের কন্যারা বস্ত্র পরিবর্ত করে ও তাদের চুপড়ি ইত্যাদি রাখে। মন্নি নামের ওই নাগকন্যাটিকে তার চুপড়িসহ সেই ঘরটিতে নিয়ে গিয়ে অক্রুর দ্বার বন্ধ করলেন! সুধন্যা আর ধৃতার কথা মনে পড়ায় তার শরীর চঞ্চল হয়েছে।

             দুই অন্ধককন্যার জন্য এখন এক নাগকন্যাকে কিছু অবাঞ্ছিত ভার বহন করতে হবে!



         



দিবা দ্বিপ্রহর হতে কতো দেরি? ভ্রু কুঞ্চিত করে সূর্যের দিকে তাকালেন অক্রুর। শীতঋতুতে সূর্য দক্ষিণদিকে একটু নেমে যায়, তির্যক হয়ে পড়ে তার রশ্মি, শীতঋতুতে আলো দেখে বেলা অনুমান করতেও হয় অন্যভাবে। দ্বিপ্রহরের এখনও কয়েকদণ্ড বাকি আছে। যথাসময়ে গেলেই হবে।

          ইদানীং অক্রুরের জীবনে মদ্যপপর্ব চলছে। আসবাসক্তরা অক্রুরকেই কেন যে এত সুহৃদ ভেবে ফেলেন, কে জানে! নবতম সংযোজন যাদবরাজ উগ্রসেন। তাঁর পুত্রটি চতুর্দিকে দুর্দান্তপনা করে বেড়ায়, তাকে সামলাতে না পারার যন্ত্রণা থেকেই কিনা কে জানে, মহামতি উগ্রসেন অধুনা সুরারসে একটু বেশিই মজেছেন। আভীরপল্লীতে একদিন অক্রুর এক অপূর্ব  পানীয় আস্বাদ করেছিলেন। মধূকপুষ্পজাত সে তরল দুইপাত্র উদরস্থ করে তিনি সোজা পায়ে দাঁড়াতে পারছিলেন না। ওরা বলে মধুকা। আঃ সে এক পানীয় বটে! সংজ্ঞা হারানোর এক মধুর উপায়। তিনপাত্র উদরস্থ করো, তারপর ধুলিশয্যাকেই তুমি এমন প্রেমে আলিঙ্গন করবে, যে হস্তিদন্তনির্মিত পর্য্যঙ্কের দুগ্ধফেননিভ শয্যাও ঈর্ষাকাতর হবে। অক্রুর বড় বংশের সন্তান, দেহের বিশেষ বিশেষ স্থানে রোমোদগমের সময় থেকেই আসবপানে অভ্যস্ত, প্রথমবার মধুকাপান করবার সময় ভেবেছিলেন, এ আর এমন কি, কলস উড়িয়ে দেব পলকপাতে। তিনপাত্র উদরস্থ করার পর মুত্রত্যাগ করতে গিয়ে দেখলেন মাঝে মাঝে পা এমন জায়গায় পড়ছে, যেখানে তিনি ফেলতে চাইছেন না। ব্যাটা হস্তিমূর্খ আভীরগুলো আগে থেকেই দাঁত বের করে হাস্য করছিলো, অক্রুরের পদস্খলন দেখে তারা খ্যা খ্যা করে হাসতে আরম্ভ করে। শিংশপা বৃক্ষটির কাছে ঢালু স্থানটি, সেখানে এরা গুচ্ছ আবর্জনা ফেলেছে, ভুক্তাবশিষ্টও, দুইটি কুকুর সেখানে খাদ্য শুঁকে বেড়াচ্ছে দেখে তিনি একটু সরে গেলেন, পাশের গুল্মটির দিকে। মুত্রত্যাগ করার পর বস্ত্রাবরণ বাঁধতে গিয়ে খুঁজে পাচ্ছিলেন না তিনি। এবং আভীর ব্যাটারা, অপবিত্র জন্তুজাত শ্যালকপুত্রেরা আরও বেশি করে খ্যা খ্যা করছিলো। ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে তিনি ভাবলেন, এদের দেখিয়ে দিতে হবে তার ক্ষমতা। হ্যাঁ, ফেরার পথে ঈষৎ টলে গিয়ে শিশংপা গাছটিতে তিনি একবার হাত রেখেছিলেন, তো কি হয়েছে? তিনি মোটেই ভারসাম্য হারাননি। শিংশপা গাছটিতে হাত দিতে তার ইচ্ছে হতেই পারে। ফিরে এসে তিনি আবার বসলেন মধুকাপানের আসরে। অপাঙ্গে দেখলেন, সব আভীর ব্যাটার ওষ্ঠপ্রান্তে হাসির আভাস। ক্রোধ।অবহেলে আরো একপাত্র নিলেন অক্রুর। দীর্ঘ এক চুমুক দিলেন তাতে।

           তারপর যে কী হয়েছিল তার ঠিক মনে নেই। জ্ঞান ফিরতে দেখলেন, তিনি আভীরদের ওই কুটিরে তাদের ছিন্ন কন্থায় শুয়ে আছেন, একলা, কেউ নেই। না, তার অস্ত্র, পাদুকা, কোমরের কাছে রাখা মুদ্রাকয়টি, এসব ঠিকই আছে। তার মাথার কাছাকাছিই একটা ছোটো পিণ্ডমতো, সেখানে কিছু মক্ষিকা উড়ছে। ওঃ ওটা তো তিনি বমন করেছিলেন। হ্যাঁ, কখন যেন তার বমনোদ্রেক হয়েছিলো, রাত্রে, ঘুমঘোরেই, তিনি ভেবেছিলেন তিনি বমন করার স্বপ্ন দেখছেন। তাহলে স্বপ্ন নয়, তিনি বাস্তবিকই বমন করেছিলেন? আঃ কি সুখের এই বমন, কি আরামের এই সুখশয্যা, একথা ভেবে তিনি আবার বমনের উপরেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।

          সেই মধুকা। একবার নৃপতি উগ্রসেনকে মধুকা এনে দিয়েছিলেন অক্রুর। নৃপতিদের অমন দিতে টিতে হয়। যাদবরাজ এবং গোষ্ঠীমুখ্যদের সকলের সঙ্গেই অক্রুরের পরিচয় আছে, ঘনিষ্টতা সকলের সঙ্গে নেই, সে হয়ে যাবে সময়ে সময়ে। এখন উগ্রসেন যাদবরাজ এবং যা লক্ষণ দেখা যাচ্ছে তাঁর পুত্রটির অতি দ্রুত উত্থান হচ্ছে। এদের সকলকেই তুষ্ট রাখতে হয়, অক্রুর প্রত্যেকের পূজার আলাদা আলাদা মন্ত্র জানেন। প্রত্যেকের কাছে প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠা অক্রুর এই অল্প বয়েসেই অভ্যাস করে ফেলেছেন। আহুক উগ্রসেনকে এই মধুকা পান করানোর পর উগ্রসেন যে তাকে কি প্রীতির চক্ষেই দেখছেন কহতব্য নয়! দণ্ডে দণ্ডে বার্তা আসে, প্রভূ স্মরণ করেছেন! খুবই উদ্ব্যস্ততা ও আগ্রহ দেখিয়ে বার্তাবাহীকে প্রেরণ করেই দন্ত কিড়মিড় করেন অক্রুর। হুঁঃ, প্রভূ স্মরণ করেছেন! প্রভুর তো ভোজন ও শয়ন ছাড়া আর কাজটি নেই, স্মরণ করলেই হলো! অক্রুরকে সারাদিন নানাবিধ বৈষয়িক সন্ধানে ব্যতীত করতে হয়! প্রভূর সঙ্গে বসে বসে আসবপান করলেই তার চলবে নাকি?

        এই মধুকাতে আসক্ত হবার পর থেকে আর আপরাহ্নিক সভায় বসেন না উগ্রসেন। কখনো কখনো, তেমন প্রয়োজন উপস্থিত হলে জরুরী সভা যদি ডাকতেও হয়, তার নেতৃত্ব দেয় উগ্রসেনের পুত্র কংস। ক্রমশঃই সে তার থাবা বিস্তার করছে, সকল গোষ্ঠীমুখ্যরাই দেখছেন, এই অভ্যাস তাদের পছন্দও হচ্ছেনা বোঝাই যায় কিন্তু এখনও কংসের বিরুদ্ধে তেমন কোন ঘূর্ণি তৈরি হয় নি। পিতা যযাতির জ্যেষ্ঠ পুত্র যদু, সেই যদুর বংশের দুই কম এক কুড়ি শাখায় এখন সমসংখ্যক কূল, প্রত্যেকটি কূল মিলে স্থির করে যাদবরাজ হয়ে মথুরার সিংহাসনে কে বসবে। কিন্তু যে-ই যাদবরাজ হোক, রাজত্বটি তার পৈতৃক সম্পত্তি নয় যে সেটি সে তার পুত্রকে দান করতে পারে। উগ্রসেন যদি রাজত্বভার নিতে অসমর্থ হ'ন, তাহলে পরবর্তী রাজা কে, তা সংঘমুখ্যরাই স্থির করে নেবেন। উগ্রসেনপুত্র কংস এক সদ্যগুম্ফোদ্গত কিশোর, রাজ্য পরিচালনার সমস্ত বিষয়ে তার এত আবশ্যিক উপস্থিতিটা বর্ষীয়ান সংঘমুখ্যরা ভালো চোখে দেখছেন না অবশ্যই। কংস এক দুর্দান্ত প্রকৃতির কিশোর, অধিক তার প্রাণশক্তি, নিজের চারপাশে একদল পারিষদও যোগাড় হয়ে গেছে তার। শোনা যায়, দেব উগ্রসেনের ঔরসে না, এক দানবের ঔরসে জন্ম কংসর। মথুরা নগরী থেকে কতিপয় ক্রোশ উত্তরে পর্বতপ্রতিম উচ্চাবচ ভূমি সংলগ্ন জলাশয়, সুযামুন পর্বত, সেখানে প্রমোদভ্রমণে গিয়ে নাকি কংসমাতা এক দানব দ্বারা ধর্ষিতা হ'ন। সৌভপতি দ্রুমিল সেই দানবের নাম। সেই ধর্ষণজাত সন্তান কংস, তার স্বভাব তো উগ্র হবেই। পারিষদেরাও তেমনই। এক একজন নিজেকে সেনাপতি মনে করে কিম্বা মন্ত্রী। সমধিক উগ্রতা তারাও অভ্যাস করে। অক্রুর কংসের সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন। আজ বাদে কাল যদি কংস সত্যিই রাজপদ অধিগ্রহণ করে, সম্পর্কটা রাখা থাক। এ মথুরানগরীতে সম্ভবতঃ অক্রুরই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি কংস এবং তার পিতা উগ্রসেন, উভয়েরই মদ্যপানসঙ্গী হয়েছেন।

           কংসমাতা পদ্মাবতীর সঙ্গে অক্রুরের নিভৃত বৈঠকের কথা পদ্মাবতীর নিষাদী দাসী ব্যতীত আর কেউ জানে না।

No comments:

Post a Comment