বাক্‌ ১৪০ ।। জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা





দুঃস্বপ্ন-ঘোর চোখে দেখলাম শোকগ্রস্ত চিবুক থেকে ঝরে পড়ছে শিশিরবিন্দু। রাতের অন্তিম প্রহরে শিশির-অবগাহন... পড়ন্ত বেলা এসে শুষে নেবে সব।

পুব দিক আলো হতেই দেখলাম স্ফটিক শুভ্র শিশিরবিন্দুরা, এক এক করে বিদায় নিচ্ছে চিন্তামগ্ন কুব্জ শরীর থেকে।
স্বজন বিয়োগের শোকে দীর্ঘ হচ্ছে পরিত্যক্ত ছায়া, গড়িয়ে পড়ছে ধাপে ধাপে কাঁটাচামচ, ছুরি আর শুয়োরের ঝলসানো মাংসের দিকে। রোমাঞ্চে
 জেগে উঠছে... তুলতুলে বেড়ালের লোম, অপ্রস্তুত অতিথি, কুমারী স্তনের বৃন্ত, বৃদ্ধের শিশ্ন... সব।
এভাবেই আরও একবার দুঃস্বপ্নটা শুরু করা যায় গিলোটিনের পাশে গলন্ত মোমবাতি রেখে।
অথচ এখন, স্খলিত রাত-পোশাক আমাকে আরো ক্লীব করে তোলে... ব্রহ্মমুহূর্তের থেকেও বেশি পথ্য হয়ে ওঠে কয়েক ঘন্টার অসাড় ঘুম।




কাচের শিশি দুটো যথেষ্ট আছাড়ের পরেও ভাঙল না। দোতলার বারান্দা থেকে ফেলার পর একটা প্রশান্তির হাসির মহড়া দিয়েছিলাম মনে মনে।
দুটোই পড়ে গড়িয়ে গেল দুদিকে। সামান্য চিড় ধরেছে কিনা, ওপর থেকে টের পাওয়া দায়। তার জন্যেও নীচে নামতে হবে।
 
তাদের ঘোলাটে আর বাদামি শরীর ভেদ করে বাল্ব, সূর্য অথবা চাঁদের আলো দেখার অভিজ্ঞতা ছাপিয়ে গেছিল এই ভাঙার জেদ। কিন্তু ভাঙল কই?
বহু ব্যর্থতার পর প্রথমবার মনে হচ্ছে (নিজেই) কাচের তৈরি হলে ভাল হত। ঠিক এমন কাচের তৈরি, যেমন এই শিশি দুটো।

প্রায় পঁচিশ ফুট নীচে, ওরা পড়ে আছে... আপাত অক্ষত। আমি হ'লে... থাক।
ঘোলাটেটা আতরের, বিয়ের উপহার ছিল... আর বাদামীটা... থাক।
 








ঘুমের ওষুধের মতো রাস্তা-জুড়ে ছড়িয়ে আছে ঝরা ফুল। পাছে মারিয়ে যেতে হয়, তাই ঘুর পথে ফিরছি আজকাল। আর সবাই ও পথেই ফেরে। পিষে যাওয়া ফুলের গন্ধ পাই পাশের রাস্তা থেকে... স্নান করতে করতে... বিছানায় শুয়ে। আশঙ্কা হয় 

কোনও সাড়হীন হাতের মুঠোয় হয়ত পাওয়া যাবে একমুঠো ঝরে পড়া বেগুনি ফুল। অথবা, সেই ঘরের কোণে গড়িয়ে যাওয়া খালি শিশি যাতে একসাথে জমানো ছিল অনেকগুলো শুকিয়ে যাওয়া ফুল। 

উড়ন্ত বীজের মত ছড়িয়ে যায় আশঙ্কারা। অ্যালার্জি হয় কাছের মানুষদের। টের পাই। 

প্রেসক্রিপশন ছাড়া চট করে পাওয়া যায় না ঝরা ফুলগুলো। পরিবারের কড়া পাহারায়, শোয়ার একটা করে ঝরা ফুল... হাতের মুঠোয় নিয়ে শুচ্ছি রোজ। 










শুধু উন্মুক্ত পিঠ কেন? আরো অনেক জায়গা খালি পড়ে আছে... হাহাকার করছে প্রিয় শব্দ চুমু খাবে বলে। 

উল্কি এঁকো না, ব্যথা বাড়ে, সহ্য করতে হয়... দাগ হয়ে তাড়া করে স্মৃতি তিক্ত হলে। লবণ-সিক্ত হলে কামড় বসায়। 

দেখেছি পরখ করে... কারও কারও এত হালকা রঙ  একটা বৃষ্টি, কিংবা একবার স্নানের পরেই ফিকে হয়ে যায়। প্রিয় শব্দের অসম্পূর্ণ অবশেষ উবে যায় এক আশ্চর্য মিথ্যের মত। 

এমন রঙ নিও... যাতে একটা পূর্ণ বসন্ত পার করে দিতে পারে।   

কাঁধ, গ্রীবা, স্তনযুগল, নাভিতট, ঊরু, নিতম্ব, সযত্নে কামানো যৌন-কেশ - কে কোন শব্দ, কে কোন বর্ণ পেলে যত্ন পাওয়া মরশুমী ফুলের মত দুলে দুলে উঠবে এ ফাগুন বাতাসে... আমি বলে দেবো।  

ওহে... ঘাড় ধাক্কা না দিয়েই চলে যাবে?  ভিজিটিং আওয়ার যে আজও কুমারী থেকে গেল! 


                                                            চিত্রঋণ- শোভিত রায়


3 comments: