বাক্‌ ১৪০ ।। দারিন তাতুরের কবিতা ।। অনুবাদ : সোহেল ইসলাম



দারি তাতুর একজন পালেস্তানীয় কবিএছাড়াও তাঁর অন্য কাজ হল ফটোগ্রাফি করা ও সমাজসেবা। জন্ম ১৬ এপ্রিল, ১৯৮২ রিয়েনাতে রিয়েনা অর্থাৎ ইরায়েলের দখলে থাকা এক শহর তিনি তাঁর মাতৃভাষা আরবিতেই কবিতা লেখেন এবং কবিতা দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন

          ফেসবুকে ও ইউটিউবে কবিতা পোস্ট করার জন্য ইরায়েলের দখলে থাকা নাজারেথ শহরের কাছে গালিলে গ্রাম থেকে কবি দারিনকে গ্রেফতার করে ইসরায়েলি পুলিশ অপরাধ কবিতা লেখা

          জনগণকে উস্কানি ও সন্ত্রাসবাদে সহযোগিতার অভিযোগে গৃহবন্দী করে রাখা হয় আড়াই বছর শেষ পর্যন্ত নাজারেথ ম্যাজিস্ট্রেট তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে জেলে পাঠায় রায়েলি রাষ্ট্র সেখানকার সংবাদমাধ্যমহারেতজ’-কে জানায়, দারিন তাতুরের অপরাধ হল কবিতা লেখা

         কী ছিল তাঁর কবিতায়, যে কবিকে জেল খাটতে হবে

        আরবিতে কবিতার নামকাওয়েম ইয়া শাব্বি কাওয়েমাহাম ইংরেজিতেরেজিস্ট মাই পিপল, রেজিস্ট দেম বাংলায় সহজ করে বললে শোনায়, রুখে দাঁড়াও, আমার জনগণ,রুখে দাও তাদের এতে গ্রেফতারের কী আছে? দোষী সাব্যস্ত করে দেওয়া রায়ে জানানো হয়, একটি ভিডিওতে দেখা গেছে মুখোশ পরা এক পালেস্তানীয় যখন ইরায়েলি সেনাদের পাথর ছুঁড়ছে, ব্যাকগ্রাউন্ডে শোনা যাচ্ছে কবি দারিনের কণ্ঠে কবিতা পাঠ সেখানে দারি'ইন্তিফাদ'-এর কথা বলছেন এবং ছবির ক্যাপশনে ভেসে উঠছেপরবর্তী শহীদ আমি এই ভিডিও প্রকাশের পর কবি দারিন তাতুর গ্রেফতার হন, কবিতার জন্য তাঁকে জেলে কাটাতে হয় পাঁচ মাস







কবিতা

শেষমেশ
ওরা আটকালই আমাকে
ঘিরে ধরল শরীর,আত্মা
এমনকি সবকিছু বাঁধতে চাইল শেকলে

বলাবলি শুরু করল :
না না ডানদিকটায়
আরেকটু উপরে...
উঁহু,
ঠিক পেছনে
একটু নীচে
আরে ঠিক খাঁজের ভেতরটায়
টেরোরিস্ট খোঁজার মত করে শুরু হল তল্লাশি
প্রথমে উপড়ে আনল হৃদয়
তারপর চোখ
শেষে আমার অনুভূতিগুলোকে চটকাতে লাগল

আমার চোখ খুঁজে পেল প্রেরণা
হৃদয়ে পেল ক্ষমতা আঁকার রঙ তুলি

ওরা বলে উঠল : সাবধান
বিস্ফোরক, নিশ্চয় পকেটে লুকানো আছে
খোঁজ চলল পকেটের

অবশেষে
আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে
নোট খাতায় লেখা হল :
কিছুই পাইনি আমরা
চিঠি আর কবিতা ছাড়া


সাবধান

কী ভেবেছো কী
এই অরাজকতা চলতে থাকবে?
সবাই চোখে ঠুলি পরে বসে আছি আমরা?
তুমি লাল কার্ড দেখাবে
আর মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যাব আমরা ?

ভুলে যেও না,
তুমিই শেষ কথা নয়
ভণ্ডামি ও অত্যাচারের একটা সীমা থাকে

স্পষ্ট গলায় জানিয়ে দিচ্ছি
সব তোলপাড় হয়ে যাবে
তুমি শাসক বলে যা ইচ্ছে তাই করবে
ফেট্টি বাঁধাদের পাঠিয়ে ভয় দেখাবে
কবি দেখলেই জেলে পুরবে এসব বন্ধ করো
যেখানে সেখানে নাক গলানো বন্ধ করও

রাষ্ট্রের মানুষ আমার পাশে
এবার চাইলেই পাশা উল্টে দিতে পারি
কেউ আর তোমাকে মেনে নিতে পারছে না
তোমার হ্যান্ড গ্রেনেড
তোমার দেখানো ভয়
তোমার হাসপাতালের বেড
মেনে নিতে চাইছে না
তারা সেই কবিতা পড়তে চায়
ইস্তেহারের লিফলেটের মতো ছড়িয়ে দিতে চায়আগুনে

দেশ যতটা তোমার
ততটা আমারও
তুমি আমাকে বাতিল করার কে ?
আমার কবিতাকে বাতিল করার কে ?
তোমার দুর্বলতা সামনে আসতে শুরু করেছে
তোমার চোখ আর ভয় লুকাতে পারছে না
আমার কবিতাকে গণসঙ্গীত হয়ে উঠতে দেখে
তোমার গলার স্বর ভেঙে গেছে

ডাকো তোমার ভেতরের পশুটাকে
ডিসিশন শোনাতে বলো
যা ইচ্ছে
যা যা ইচ্ছে
তোমাকে আর কেউ শাসক হিসাবে পুষতে চাইছে না
আমার কবিতা ওদের ভাবতে শিখিয়েছে
তোমার বিরুদ্ধে আঙুল তুলতে শিখিয়েছে
লাল-হলুদের জ্বলন্ত মশাল এগিয়ে আসছে তোমার দিকে

তোমার জাজমেন্ট তৈরি করো
জানাওকী চাও তুমি
যা ইচ্ছে
যা যা ইচ্ছে

তুমি,
তোমার জেলখানা
আমার কবিতা রুখে দিতে পারবে না কোনোদিন



স্বাধীনতা

ওরা আমাকে করল জেলবন্দী
আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধল সর্বাঙ্গ
নিভিয়ে দিল আলো
এখানেই শেষ নয়
বাইরে থেকে আলো আসাটুকুও দিল বন্ধ করে
জেলে তখন আমি
আর আমার দেখতে না পাওয়া ছায়া
দেওয়ালেই আঁকতে লাগলাম আলো
ওরা মুছে দিল দেয়ালটাকেও
বাজেয়াপ্ত করল কলম

চোখে আমার ঝলসানো রোদ
ওরা বেঁধে দিল চোখ
জিভটাতেও দিল ইঁট চাপা
আমার কবিতা তখন অন্ধকার জ্বালিয়েছে ভেতরে
আমি জ্বালিয়েছে আত্মার মধ্যে অনুভূতি
অক্ষরগুলো জ্বালিয়েছে প্রদীপ
এই শেকল হয়ত আমার হাত বেঁধে দিতে পারে
কিন্তু আমার শিহরণ ও শব্দ বাঁধবে কী করে
হে আমার প্রিয় স্বাধীনতা
তুমি নিশ্চিত থাকো
ওরা আমার কণ্ঠস্বর বাঁধতে পারবে না কোনোদিন

12 comments:

  1. আমি কবিতার কিছু বুঝি না, কিন্তু কি বলবো সোহেল দা তোমার কবিতা অনুবাদ হতে পারে, সেটা এত সুন্দর না পরলে বুঝতে পারতাম না। এক কথায় অসাধরণ.....

    ReplyDelete
  2. ভীষণ ভালো। বিপ্লব তোর শব্দে বাস করে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক,ভালোবাসা

      Delete
  3. ভালোলাগলো। আরও চাই।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরও করার চেষ্টা চলছে,নজর থাকুক পরের সংখ্যায় আবার আসবো এরকমই কোনও ঘটনা নিয়ে

      Delete
  4. কবিতার সাথে আনুষঙ্গিক তথ্যগুলো থাকায় আরো সমৃদ্ধ হলাম । অনবদ্য অনুবাদ সোহেল ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভালোবাসা নিও,পরের সংখ্যায় নজর রাখো চেষ্টা করছি নতুন কিছু আনার

      Delete
  5. ভীষণ ভাল কাজ। সোহেল আমার প্রিয় কবি।

    ReplyDelete
  6. তমালী15 April 2020 at 12:12

    আমি গর্ববোধ করছি নিজেকে তোমার বন্ধু ভেবে। তুমি আমায় প্রিয় কবি সোহেল। আমি যে কত বড় উজবুক এই কবিতা এতদিন বাদে পড়লাম!এতদিন বঞ্চিত হয়ে ছিলাম এ কবিতার আগুন থেকে। আমার যতই খামখেয়ালীপনা থাকুক, আমাকে তোমার কবিতা পাঠানো বন্ধ করো না। এমন আরো আরো অনুবাদ করো আমারা সমৃদ্ধ হই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই অনুবাদ দেশকালসীমা পেরিয়ে আজও এখানেও যেন সমান প্রাসঙ্গিক! ভালোবাসা নিও

    ReplyDelete