বাক্‌ ১৪০ ।। লেনোর কানডেলের কবিতাগুচ্ছ ।। অনুবাদ শুভদীপ নায়ক




নিখোঁজপত্রের কবিতাগুচ্ছ



দ্য লস্ট লেটার্স পোয়েট্রি

( THE LOST LETTERS POETRY )





অনুবাদ ও আয়োজন- শুভদীপ নায়ক







উৎসর্গ : বিট জেনারেশানের কবি লেনোর কানডেল






আঁধারে অলৌকিক ধ্বনি, পর্দা টাঙানো এই নীলধোঁয়াঘর

সিঁড়ি দিয়ে উঠে এল বহুদূর প্রান্তিক উচাটন হাওয়া

দৃশ্য থেকে শুরু হল ভাব, প্রিয় রচনাটি, ছায়াপাত

মেঝের ওপরে পড়ে ‘আয়নাযতন’— কটুকাব্য

তাসের ওপিঠে রাখা শীর্ণ আঙুলে লালরঙা নেলপালিশ

খোঁপা থেকে খুলে দিল আশ্বস্ত প্রলম্বিত কালোচুল

গা থেকে নামিয়ে দিল স্বর্গীয় এস্রাজের সুষমার স্বর

বোতামের দগ্ধরূপ, তেজ, স্বীয় তাঁর আতুর জানালা

আমি ফের প্রতিজ্ঞা করেছি আদ্যপ্রান্ত তাঁকে আফিমের

নেশায় ডুবাবো, সুরায় ভেজাব তাঁর মধুময় বুক

ফুলের কুঁড়িটি ফোটে শেষ ভোরবেলা—

লেবুর টকে, পতঙ্গের ছেঁড়া দুটি ডানার কবল থেকে

পুনরায় নেমে যায়, ভেসে যায়, অহেতুক বিষসর্পশিখা

এইবেলা চুমু খাও পাতার আড়ালে , এইবেলা মৌতাতে

মেতে যাক চাঁদের সুরেলা কোণ, বানভাসি বইয়ের চেতনা—

দেবদূত, শ্লথ হয়ে স্নায়ুর জড়তা থেকে

ঊরুর বেদনা থেকে তুলে ছিঁড়ে আনো

টুকরো টুকরো সর্বনাশা ঢেউ, তীরে এসো, ফিরে এসো

এসো দুহাতে নিপুণ লেখা ব্যাভিচার ভেঙে ফেলি

ফুটে থাকা স্বপ্নের সৈকতে ভেজা বালি আর শাঁখের শহরে






‘সাবানের ফেনা লেগে দুইখানা স্তন

চিতা হয়ে শকুন হয়ে নেকড়ের ধারালো

দাঁতের মতো ছুটে গেছে ও-প্রেমিক তোমার দিকে’

নতুন লেপের নিচে পুরনো আলস্য, স্তম্ভিত নেশা,

বিছানার বদনামে ঘেরা সব অপমান, মাধুর্য

ওম্ , আর ছটফটে রশ্মিময় অাজানু ভালবাসা

‘লাইট জ্বেলে বিছানায় উপুড় হয়ে সাদা পৃষ্ঠা জুড়ে

অপরূপ যাবতীয় নগ্ন ভর্ৎসনা , লিখেছি লিখেছি

ও-প্রেমিক তোমাকে’— বিনুনি বেঁধেছি, আতর ছড়ানো

দেহ ডুবে গেছে খসে গেছে কত রাতে তারার মতন

হায় ! কবির শিরোপা নিয়ে আমি অতি মহিমায়

চিরকাল চির-অনন্ত তুমুল আলোড়নে বিদ্রুপে

শিলাখণ্ড হয়ে বরফ হয়ে নভোশ্চরে ভেসে যাই

শীতের যন্ত্রণা ঠেলে উঠে পড়ি, ফাইলপত্র ঠেলে

লিখে নিই আস্ত রাতের স্বপ্নে পোড়া মহলের শ্বাসগল্প

কোটের পকেটে ভাঁজ করা চিঠি, জারণের সহস্র প্রস্তাব

স্কার্ফের উষ্ণতা ধীরে ধীরে আমাকে পোড়ায়

দরজা খুলেছি যেই জীবনে, প্রথম মেয়েলি শরীরে

বিদগ্ধ পুরুষের ঝড় আছড়ে পড়েছে , সিঁড়ির দুপাশে

আঁটোসাঁটো বরফের স্তূপ, বিগত রাতে লাজুক ল্যাম্পপোস্টে





ফিরে গিয়ে কী মুখ দেখাব স্বামীকে, সন্তানদের

আপেলরঙের মতো রতিসুখ, ম্লানমুখী সূর্য উঠেছে

‘নিবিড় শরীরী এক যুবতী আর এক মায়াময় রেলব্রিজ

কলঙ্কে ঝরে পড়া নদীটির বুকে দাঁড়িয়ে কতবার

কতবার কতবার মরেছে, ও-প্রেমিক তুমি কি শুনেছ ?’








লিখতে লিখতে কলম থামিয়ে তাকিয়েছিলে—

লেখার শরীরে তখন তন্দ্রা,  প্রয়াত অতীত-রাত,

চ্যুতি দেখা দিয়েছে , ফাটল ধরেছে , তাই খাদের কিনারে

গড়িয়ে চলেছ ধীরে, এইবার সব সুখ আছড়ে পড়বে

হাজার বছর ধরে লেখা সব কবিতার হরফে,

লেখার টেবিল থেকে উঠে গেলে আলো নিভিয়ে

চারিপাশে মন্দ বাতাস, আয়নায় ভুল দৃশ্য, বিছানায়

লেগে আছে ভাঙচুর হয়ে পড়া গৃহযুদ্ধের আদর !

আমি এখন আর তোমাকে ভালবাসতে পারব না

আমি কিছুতেই পারব না তোমার আমিষ ঠোঁটে

শাকপাতা আর সবুজ শরীর নিয়ে

ফুটে থাকা জ্যোৎস্নার স্রোতটুকু আনতে

উপুড় হয়ে যেভাবে শুয়েছ, মৃদু ঝর্না নেমেছে পিঠের একপাশে

এলোচুলে ঢেকেছ বুকের বাঁ-দিক, ওখানেই তিল ছিল

ওখানেই সাম্রাজ্যবাদ বিবাহজীবন অসুখের প্রস্তাবে

প্রতিদিন ভরে উঠত, প্রথম সন্তানের ধাঁচে সেবার

পুনরায় গর্ভবতী হলে, খোঁজ পেলে তোমার পিতার

নাকি দ্বিতীয় স্ত্রী ছিল, জর্জ ও স্টিফেন দুই ভাইয়ের

একভাই মারা গেল গর্ভেই , তুমি তখন ফ্র্যান্সিস্কো

ছেড়ে চলে এলে, তুমি তখন নিজস্ব ধোঁয়ায় মৃত্যুর

বুনট জালে খাদ্য করেছ নিজেকে, এভাবেই লেখার ভিতরে

পুনরায় কবিতায় বাড়তে থাকল লাইন, পংক্তিরা

ছন্দ হারিয়ে বিদ্রোহ হারিয়ে সুদীর্ঘ জ্বালায় ভরে উঠল

পতাকাবাহী মিছিলের পথ ধরে এসব কলঙ্কিত

লেখারা ছুটে যায়, তোমার লেখার পাতায় ভোর নামে

ঘাসের জঙ্গলে বাঘের ছুটন্ত রক্তের শিকারের মতো









তোমার নিষিদ্ধ ভালবাসার কাব্যগ্রন্থটি






পরশপাথর !



আমিও বুঝিনি



সেও কি তোমার সাংঘাতিক



দুটি ঘোলাটে হিংস্র চোখ



সেও কি তোমার কাঁধ থেকে



হঠাৎ নামিয়ে রাখা সামুদ্রিক ঢেউ



আড়ালে যে গাছ বেড়ে উঠেছে



যে সন্ত্রাস তুমি লুকিয়ে তোমার



শরীর ও মনের ভিতরে চালাও



তবু অন্ধকার শহরতলি ছেড়ে যে নদি





উৎস্রোত সম্পর্ক বয়ে নিয়ে চলেছে সমুদ্রে



তার অন্ধকারে ধিকিধিকি জ্বলছে চরমশূন্য পাপ



পাপ যিশুর জন্মে



পাপ বুদ্ধের আত্মমগ্ন ধ্যানে



নীল পাখিদের পালকে



আর



অভিনব তরঙ্গফেনায়










বাবা-মায়ের বদ্ধপরিকর জীবন ছেড়ে



আমরা আলাদা হলাম



প্রথমে শহরের শেষপ্রান্তে



বেকারির দোকানের ওপরে একটি



দু কামরার বাড়ি



কয়েকটি জানলা



দেওয়ালগুলোতে টাঙানো



আমাদের সন্ধেবেলার ফিরে আসা গল্প



টেবিলে ও বিছানার দুপাশে



বিস্তর বই জমা হয়েছে



মেঝেতে স্তূপীকৃত পত্রিকা



যার কোন কোন পাতায় চায়ের কাপের ছাপ



গোলাকার জীবন !



এতগুলো গোলাপের পাপড়ি



এত যুদ্ধের শেষে এই প্রথম



তুলে নেওয়া অস্তমিত দুজনের কলম



বিছানায় তোমার প্রসারিত দুটি নগ্ন পা



কোলের ওপরে বই নিয়ে বসে পড়ছ



অরক্ষিত দুঃখভারাক্রান্ত বেশ্যাদের কথা



কার্পেটে চাপা আছে লুপ্তপ্রণয়,  অধিকন্তু



সঙ্গম ও ভালবাসাবাসির সব দেবতারা



আছে মহলে, আছে জগতের খিলানগুলির



একে একে অস্তিত্বে ভেঙে পড়া



বস্তুত একদিন ঘর বদলে যাবে



অন্যরাস্তার পাশে যখন উঠে যাব



অন্যকারোর বাড়িতে , বদলে যাবে প্রতিবেশী



আসবাব, বই ও লেখার কাগজগুলোর সঙ্গে



নতুন বাড়িতে গিয়ে উঠবে বদনামের সম্পর্কেরা



মেঝে আর ছাদের মধ্যবর্তী শূন্যতায়



এর চেয়ে বেশি কিছু স্মৃতি কখনো কি ফুটে উঠবে ?



সেইবার প্রথম দুজনকে ছুঁয়েছিল নরকের পোকারা










মারিহুয়ানার নেশা করে ফিরেছিলে

রাত তখন তিনটে, পরনে ব্লু জিনস

জামরঙা শার্টের আধখোলা বোতামের

ভিতর দিয়ে ভেঙে পড়েছে পর্বত, খোলাচুল

পিঠের ওপরে, চোখের সমস্ত অতল ভেসেছে,

যেন এইবার বাঁধ ভেঙে অশরীরী জলে

ভেসে যাবে সব ধানখেত, বৃষ্টি নামার আগেই ।



মাইকেলের সঙ্গে কাটানো সমস্ত সন্ধে, দিশেহারা

যুবতী জীবন ছাড়িয়ে তুমি তখন শূন্যগর্ভ মেঘে

বজ্রবিদ্যুৎ হয়ে হানা দিয়েছ,আর বিকেলগুলো

আগেই ঝরেছে প্রলাপ নিয়ে আশ্বাস নিয়ে

মাটির নিচের থেকে চারাগাছ হয়ে সেইমতো

বেড়ে চলে বিমুখ জীবন, ছুঁয়েছি যাকে শেষরাতে








রবিবারের এক কৃষ্ণ আকাশের বিকেল

নতুন পিচবোর্ড আর ছুরি নিয়ে বাক্স তৈরিতে

তুমি ব্যস্ত উত্তরণ হবে বলে সে সময় মাতাল

গন্ধে ভেসে যাচ্ছে রাস্তার ধারের ঝুলবারান্দা

রেলিঙের নতুন রঙে এইবার বৃষ্টির ছিটে লেগে

যে ছবি ফুটবে তার কাহিনিতে বেঁচে থাকা অত

সহজ নয় বিংশ শতাব্দির অনেক আগে

এই পাথরের দেওয়াল তোলা বড় বড় মহলে

সৈন্য থাকত আস্তাবলে ঘোড়া পিছনের

হলুদখেতে সাদা পোশাক পরা বালিকারা

কী শিশুসুলভ আড়ষ্টতায় ফুল দিত

                                     সমাধিক্ষেত্রে








বিভিন্ন লেখার মধ্যে আমাদের যন্ত্রণাবাহী দিন

এসে গেল যেখানে যা থামার ছিল তুলো আর

রক্তে রাঙানো ব্যাণ্ডেজ কাঁচি চিমটের সঙ্গে স্পিরিটের

বোতল আর ব্লাডপ্রেসার মাপার যন্ত্রটি নিয়ে ডাক্তার

আমাকে বাইরে দাঁড়াতে বলে গেল ফরসেপগুলো

ট্রে তে নিয়ে নার্সেরা ঢুকলো মুখে মাস্ক পরে

সুচিকিৎসার হাসপাতাল ছাড়া এই মুহূর্তে কোথায়

তোমাকে নিয়ে যেতাম আমি ব্রিজ আর রেলগেট

পার করে নিদারুণ অরণ্য ছাড়া বুকের ওপরে

তুমি পীতবর্ণ প্রেমিকা হয়ে শোণিত চুমুর স্পর্শে

আমার বুকের লৌহ অর্গলগুলো ভাঙছিলে

সমস্ত ধাতু ও সবকটা পাথরের মূর্তি তোমার

পিঠ ফুঁড়ে উঠছিল আর তোমার পোশাক ধীরে ধীরে

ছিঁড়ে যেতে থাকল আমি ডানহাতে তোমার

উলঙ্গ ক্ষীণ কটিদেশ ধরে কোনমতে আশ্রয় নিয়েছিলাম

তুমি শীৎকার ঘনিয়ে আরামে শুয়েছিলে তখন

তোমার প্রধান প্রাপ্তি ছিল অবিরাম সুখ খুঁজে চলা

নৌকোর মতো বেঁকিয়ে আসছিল সদ্য ঋজুলা শরীর

তুমি রতিসুখে বৃষ্টি নামালে মরুভূমিতে তাই

উটেরা দাঁড়িয়ে ভিজছে যেভাবে সোনা গলে দেহের ভিতরে







পিস্তলের শরীর ও বুলেটের কবিতা






ম্যানহাটনের রাজপথে তখন জড়ো হচ্ছে কৃষ্ণাঙ্গ  যুবকযুবতীরা তারা

ইহুদিজীবনকে ঘৃণা করতে শিখেছে তবু স্বেদ আদর ও রক্তপাতের ইতিহাস

তাদের মন থেকে একেবারে মুছে যায়নি ফুলের টবের মধ্যে মাটি

আর পর্যাপ্ত সার দিতে দিতে একসময় এদের মধ্যে ভালবাসার সম্পর্ক

তৈরি হয়েছিল ট্রানসাম সিনিকে জড়িয়েই দরজা দিয়েছিল গোপনে

আড়াল থেকে অনেকেই তাদের সঙ্গম দেখে ফ্যালে আর পল-কে বোঝায়

ওরা পরস্পর শুধু শরীরের তাড়নায় এসে পড়েনি ওরা প্রাচীন থেকে

উন্মাদের মতো জড়িয়ে নিজেদের খুঁজে চলেছিল অনেকগুলো

ভুল সম্পর্কের ভিতর দিয়ে আজ এই ন্যস্ত সন্ধ্যায় আমরা ওদের মুক্তি দিই

অপার্থিব বেদনা নিয়ে ব্রুকলিনে ফিরে যায় পল তার বান্ধবী ম্যাডোনার

ঈর্ষা আর শরীর এক রাতে গ্রাস করে বিয়ের কাঁটাতার ছিড়ে সেই অভূতপূর্ব

দুটি মানুষের মিলন সঙ্গীতের মতো বেজে ওঠে সেদিনকার মিছিলে তারাও ছিল

কোহেন-লিরয় দুজনের বিচ্ছেদ সিলভিয়াকে মাতৃত্বের সুখ দিয়েছিল

এই ভূ-ভারতে কেউ এঁরা বেঁচে নেই অস্ত্রাগার আর সামরিক সৈন্যের গুলিতে

এঁদের সকলে আজ মৃত এঁরা একেকটি পিস্তল তুলে কাগজের গায়ে অসংখ্য

রক্তস্মৃতি এঁকেছে সেইসব বারুদের অস্পষ্ট জীবন গুলি লেগে লুটিয়ে পড়েছে

ভারতেও সীমান্ত পার করে অনেকে ঢুকে পড়েছে আরক্ত তাড়নায়

বাঁচার অনেক তাগিদ ছিল যদি না মেরে ফেলা হত পুড়িয়ে ফেলা হত

জমির সবুজ ঘাস পরিষ্কার করে সেখানে গড়ে তোলা হত প্রাসাদ আর

নির্দেশ দেওয়ার প্রশাসনিক সব ভবনগুলোকে






এই যে গলিত অন্ধকার বেয়ে বেয়ে পড়ছে তোমার দুটো নরম কাঁধ দিয়ে এই যে গলার কাছে

জমা হয়েছে বিপদগ্রস্ত ঘাম কোমরের সবটা উন্মুক্ত বুকের সামনে গিয়ে লজ্জার ঘেরাটোপে

তোমাকে এতটা আড়াল করেছে অন্য মেয়েদের চেয়ে এত তৃষা তুমি কীভাবে সঞ্চয় করেছিলে যাতে

আমি হিংস্র হয়ে উঠি কেন এত ভাঙচুর সেদিন আমাদের মধ্যে চলছিল অথচ বাইরে সব স্তূপীকৃত সাজানো

রাখা ছিল সকলের কাছে কী সেই স্বচ্ছতোয়া দৃষ্টি যাকে পরিপক্ক লাল চেরির মতো মনে হয়েছিল

চুমু খাওয়ার ঈষৎ আগে নাভির অনেক নিচে টলটলে সুধা অনুভব করলাম আমার মাথার চুলে

বিলি কেটে দিলে ক্ষুৎপিপাসায় এমনই তুমুল ঢেউ রাতের সাগরে ওঠে আর প্রতিটি পুরুষ-জাহাজ

ঘূর্ণির কবলে পড়ে তলিয়ে যায় মিশে যায় রাত্রির কালো শীতল জলে ওপরের এই দোতলার ঘরে

দরজা ঠেলে কেউ এসে পড়বে না সকলে মদ্যপ সকলে জীবনবিমুখী সকলেই খুঁজতে যায় তোমাকে

কেবল আমিই তোমাকে তাড়িয়ে দিতে চাই আমার গুহাজীবন থেকে এইভাবে প্রতিশোধস্পৃহা

তুমি বাড়িয়ে চললে আমার সঙ্গে আকাশে অনেক তারার যুদ্ধে আমি নিজেকে হারালাম







                                                                                                                                                                    



                                                                                                                              এই যে স্মৃতি বিজড়িত হয়ে

                                                                                                                   তাকিয়ে আছ তোমার গায়ের গন্ধে

                                                                                                          চুলের গন্ধে মাতাল হয়ে চেয়ে আছি যেন

                                                                                           বহু উন্মীলন পার হয়ে যায় তোমার তারারন্ধ্রে বাষ্প

                                                                                     স্তব্ধ নেশা মাদকোৎসব চিহ্নিত সুরার গ্লাসে উপচে পড়া

                                                                     সেইরকম প্রদীপ্ত ব্যঞ্জনা নিয়ে আমি তোমাকে ঘিরে রাখতে চাইছি

                                                             আমরা বিপর্যয়ে গানে নিজেদের উৎসর্গ করেছি বলেই আমাদের আজ

                                                  এত ভাঙচুর এত ঠিকানা বদল নতুন বাড়িতে অতিথিদের ডেকে পাঠানো তারা

                                         চলে যেতেই উৎসব ফিরল জমাটবদ্ধ লাভায় শীত ফিরল আগুনে সর্বনাশ নেমে এল

                                  টেবিলল্যাম্পের নিচের মৃদুমন্দ আলোয় ইজেলে রাখা ক্যানভাসের উলঙ্গ  মডেলের দেহে

   যার মানে এখনো রাত থাকতে বাইরের দরজায় তালা দিয়ে দুজনে টিকিট কেটে সীমান্তগামী ট্রেন ধরতে পারি














লরেন্স স্বেচ্ছায় আত্মনির্বাসিত হল প্রুস্তর শেষ জীবনের মতো ডায়না আর ক্যারেলের

কথা তুমি সবটা লিখতে পারনি ক্যাসডি ও ব্রেমজার তাঁদের ভালবাসাবাসির একরকম

সঙ্গ দিয়েছিলে তুমি নুন আর কাঁকড়ার শরীরে যে চিরস্থায়ী টান বালি খুঁড়ে আদর টেনে

বের করেছিল দুটি মেয়ে তাঁদের পারস্পরিক নির্জন দেহে গাছপালা আর ফুলের বাগানে

তাঁরা দোলনায় চেপে ঘনিষ্ট হাওয়ার মতো দুলেছিল ভিয়েতনামের যুদ্ধের পর চার্চগুলো

ফাঁকা হয়ে এলে সময় বদলে গেল বৃষ্টির চরিত্রে লেখা থেকে ফুটে উঠল খাদ্য বিবর্ণ ধূসর

কালো চামড়া আর শ্বেত স্পর্শের দ্বিধাগুলো রাষ্ট্রে নামল সেনাবাহিনীকে নিয়ে যাওয়া হল

মানুষের সস্তার জেলে কয়েদ কিংবা অনাহারে সেই দিন সেইসব শেকলবাঁধা রাত্রি ডিঙিয়ে

আমরা ছুটে যাচ্ছিলাম পরমাণু শক্তির দিকে সাংসদে বোমার আঘাতে খসে পড়ে ডালপালা

কম্যুনিস্ট গাছ আর জলে ডোবা আদর্শ পরিণত হতে থাকে মৃত্যুর বিভীষিকাময় অস্ত্রে 




3 comments: