বাক্‌ ১৪০ ।। ভিরার লোকাল ।। অর্ঘ্য দত্ত




পাশ দিয়ে ট্রেন যায়, ট্রেন আসে, সিগন্যালে থামে
লাইনের ধারে পতিত কুয়োটি ঘিরে ভিড় করে
প্রকৃতির দল, বারো থেকে বাহাত্তর
সারাদিন জল তোলে, কাপড়-বাসন ধোয় 
মেজে তোলে অচ্ছুৎ গতর

একদিকে  ভিরার লোকাল ঠাসা উৎসুক শ্রমণের চোখ
কুয়োটির অন্যপারে তিন তলা ব্যালকনি থেকে
তৃষ্ণার্ত আনন্দ যেন করুণায় ঝুঁকে 
দুই চোখে শুষে নেয়  বাহারি ক্লিভেজ...


ট্রেনে বসে ভেন্ডি কাটে, মটরশুঁটির দানা
ছাড়ায় যে কেরানি মহিলা
ঘরের জানালা তার কখনো খোলে না...

ঠা ঠা হাসি, চুলোচুলি, মায় জন্মদিনে কেক 
ভিরার লোকালে বাঁধা। টুকিটাকি দরদাম 
নাকফুল, টিপ-পাতা, সাদা ন্যাপথলিন আর
চেন স্ন্যাচারের ভয়...

ঘটনা বিহীন ঘর, ঠান্ডা আর  অনড় বিছানা
তারচেয়ে সহ্য হয়, চোরা ছোঁয়া, চোখে চোখ
কখনো বা বেশ লাগে ওভারব্রিজের ভিড়ে চটজলদি ভাবীজি প্রণয়


ঘেরাটোপে কৈশোর ডিঙালো যে সুশীল বালক
ভিরার লোকাল তাকে তেরাত্তিরে গুম করে দিল

প্রথম দিনের পাঠ অভিধান ছেঁচে তোলা শব্দের ভান্ডার
মাদারচোদ, আঈচি গাঁড়, আগুন আগুন  শুনে এসে
মায়ের চোখের থেকে সরিয়ে নেয়, ফিরিয়ে নেয় চোখ

দ্বিতীয় দিন বুঝে যায় কাকে বলে কনুইয়ের খেল্
শিখে নেয় বাঁচতে গেলে কী জরুরি  নখ ব্যবহার!

রোমহর্ষক তৃতীয়দিনে সহ্য হয়ে যায়
ভিড়ে, আরো ভিড়ে কোনো পুরুষের লোভী হাতে 
গোপন আদর। কেঁপে ওঠে ছেলেটির রেডি টু ইউজ পুং দাঁড়া...


চক-চকে রেলের লাইন
পুরোনো দম্পতি যেন, নির্লিপ্ত সমান্তরাল
ছাপ্পান্ন মাইল ধরে তারা ছুঁয়ে আছে জনপদ
খাড়ি আর ধূ ধূ মাঠ লবনের প্যান

কালো ব‌উটির যত জমে থাকা অভিমান
ফেল করা বালকের ভয়, 
মুলগা ও মুলগির হারানো প্রেমের আঁশ 
ঋণগ্রস্ত চাষিটির ভুখা পেট, 
সব কিছু দাঁতে পিষে ভিরার লোকাল

সারাদিন বয়ে চলে  ওইসব মৃতদের‌ই প্রিয় পরিজন

                              চিত্রঋণ- শোভিত রায়

3 comments:

  1. অসাধারণ শব্দটি ক্লিশে হয়ে গেছে,
    আর অন্য কোনও শব্দও নেই আমার শব্দ ভাণ্ডারে।
    কবি অর্ঘ্য দত্ত আমার শ্রদ্ধা নিবেন।

    ReplyDelete
  2. অর্ঘ্য দত্ত15 March 2020 at 10:53

    পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভালোবাসাও।

    ReplyDelete
  3. ১-৩ বেশ ভালো লেগেছে।

    ReplyDelete